ভরতনাট্যম - নৃত্য-পর্যায়
ভরতনাট্যম - নৃত্য-পর্যায়
নৃত্য-পর্যায়
বর্তমানে ভরতনাট্যম অনুষ্ঠান বলতে সাধারণভাবে আল্লারিপু, যতিস্বরম, শব্দম, বর্ণম, প্রভৃতি বোঝায়। কিন্তু এই ধারা গুলি বহু পরে ভরতনাট্যম নৃত্য পদ্ধতিতে সংযোজিত হয়েছে।
আল্লারিপু ভরতনাট্যম নৃত্যকলার প্রথম নৃত্য। তেলুগু শব্দ আল্লারিপু কথার অর্থ হল পুষ্পিত বা প্রস্ফুটিত হওয়া। এই পর্যায়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কে বিশুদ্ধ নৃত্যের জন্য দেহভঙ্গির সুষম সৌন্দর্যে পুষ্পিত ও প্রস্ফুটিত করা হয়। শিল্পী মাথার ওপর দুটি হাত নমস্কারের ভঙ্গীতে রেখে বোলের সাথে দৃষ্টি ও গ্রীবা কর্মের দ্বারা এই নৃত্য শুরু করেন। এটি পূর্বরঙ্গ বা বন্দনা সূচক অনুষ্ঠান। নাচের মাধ্যমে শিল্পী রঙ্গদেবতা, দর্শক, সঙ্গীত শিল্পী সকলের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
আল্লারিপু পরবর্তী অনুষ্ঠান হল যতিস্বরম। ইহা শোভা সম্পাদক নৃত্য প্রধান অংশ। দেহভঙ্গির সঙ্গীতে সুষম সৌন্দর্য সৃষ্টি করাই এই পর্যায়ে প্রধান লক্ষ্য। এই নৃত্য সংগঠনে সাধারণভাবে পাঁচ থেকে সাতটি জটিল যতি রাগাশ্রয়ী সরগম ও তাল সমন্বয়ে মৃদঙ্গ ও মন্দিরার সাহায্যে পরিবেশিত হয়। এতে দৃষ্টি, গ্রীবা, হস্ত ও পাদকর্ম প্রধান এবং কোন বিশেষ ভাব প্রকাশ করতে হয়না। অনেক ক্ষেত্রেই শিল্পীরা সৌন্দর্য সৃষ্টির উত্তেজনায় সংযমের আবেগবৃত্ত অতিক্রম করে রঞ্জনাসৃষ্টির প্রয়াস করেন। তাতে দর্শকের স্থুলরুচি পরিতৃপ্তি করে সহজেই জনপ্রিয় হওয়া যেতে পারে, কিন্তু মনের সূক্ষ্মতর আনন্দ উপলব্ধির বিঘ্ন ঘটে। ভরতনাট্যম নৃত্যধারার এই পর্যায়ে অনুষ্ঠানের বিষয়ে এই সতর্কতা বিশেষ প্রয়োজন।
যতিস্বরমের পর অনুষ্ঠিত হয় শব্দম। এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হল তেলুগু ভাষায় রচিত ভক্তিমূলক সঙ্গীতকে অভিনয়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা। সঙ্গীতের মাধ্যমে দেবতা অথবা রাজার শৌর্য, বীর্য, কীর্তি বা মহত্ত্ব বর্ণনা করা হয় এবং সঙ্গীতের শেষে অভিবন্দনা করে নৃত্যের সমাপ্তি। সংস্কৃতে এই ধরনের সঙ্গীতকে‘যশোগীতি’ বলা হয়।
শব্দমের পর অনুষ্ঠিত হয় বর্ণম। বর্ণম ভরতনাট্যমের সর্বাপেক্ষা জটিল ও আকর্ষণীয় পর্যায়। এতে নাচ এবং নাটকের এক আশ্চর্য মেলবন্ধন দেখা যায়। ভাব, রাগ ও তালযুক্ত এই অনুষ্ঠান প্রায় একঘণ্টা ব্যাপী হয়ে থাকে। আবহ সঙ্গীত প্রণয়ের অভিব্যাক্তিতে রচিত হয়। যতি গুলি অত্যন্ত জটিল ও দ্রুত হয়ে থাকে, একে ‘থিরমনম’ বলে। এর চরণম গুলি অত্যন্ত সুন্দর হয়ে থাকে। সঙ্গীতের মধ্যে কল্যাণী, নবরত্নমালিকা প্রভৃতি অপ্রচলিত রাগের প্রয়োগ দেখা যায়। এই সঙ্গীত ভাবোচ্ছল ও ভক্তিমূলক।
পরবর্তী অনুষ্ঠান হল পদম। বর্ণম অনুষ্ঠানের শ্রম বিনোদনের জন্য এই পর্যায়ে প্রেম গীতি মূলক পদ গুলি অভিনয়ের মাধ্যমে পরিবেশিত হয়। সঙ্গীতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জনপ্রিয় কবি জয়দেব, পুরন্দর দাস, খেত্রায়া রচিত মধুর পদাবলী পরিবেশিত হয়।
সর্বশেষ অনুষ্ঠান হল তিল্লানা। ভরতনাট্যম নৃত্যধারার ছন্দ, লাস্য, মাধুর্য ও গভীরতার সমন্বয়ে সৌন্দর্যের শ্রেষ্ঠতম প্রকাশ এই পর্যায়ে ছন্দিত হয়। এই নৃত্যে প্রত্যেকটি যতি বিলম্বিত, মধ্য ও দ্রুত লয়ে পরিবেশিত হয়। এই পর্যায়ে শিল্পী মাঝে মাঝে ক্ষিপ্রচটুল পাদ বিন্যাসে ও বিভিন্ন মুদ্রা প্রয়োগে বিভিন্ন ভাবব্যঞ্জনা মূর্ত করেন।


Comments
Post a Comment